প্রিয় শিক্ষার্থীরা আজকের এই পোস্ট থেকে রেখা কাকে বলে, রেখা কত প্রকার ও কি কি চিত্র এবং উদাহরণ সহ পেয়ে যাবেন। রেখার সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকার তৈরি করা যায়। যেমন: সরলরেখার সাহায্যে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি তৈরি করা যায়। আবার বক্ররেখার সাহায্যে তৈরি করা যায় বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্ত, ইত্যাদি।
তুমি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকো, তাহলে রেখা কাকে বলে? রেখা কত প্রকার ও কি কি? সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরি।
রেখা কাকে বলে?
একটি বিন্দুর চলার পথকে রেখা (Line) বলে। সহজভাবে বলতে গেলে, যখন একটি বিন্দু এক দিকে বা দুই দিকে অসীম পর্যন্ত চলতে থাকে এবং এই চলার পথে তার কোনো প্রস্থ বা বেধ থাকে না, তখন সেই চলার পথটিকে রেখা বলা হয়। রেখার কোনো শেষ নেই, এটি উভয় দিকেই অনির্দিষ্টভাবে চলতে থাকে।
রেখাকে সীমাহীনভাবে উভয় দিকে বাড়িয়ে দেওয়া যায়। দুইটি তল পরস্পরকে ছেদ করলে ছেদস্থলে একটি রেখা উৎপন্ন হয়। যেমন, বাক্সের দুইটি পৃষ্ঠতল বাক্সের এক ধারে একটি রেখায় মিলিত হয়। এই রেখা একটি সরলরেখা । একটি লেবু বা গোলাকার বস্তুকে একটি রেখা পাতলা ছুরি দিয়ে কাটলে, ছুরির সমতল যেখানে লেবুর বক্রতলকে ছেদ করে সেখানে একটি বক্ররেখা উৎপন্ন হয়।
রেখার শুধু দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই। কাজেই রেখা একমাত্রিক। বাক্সের একটি পৃষ্ঠতলের প্রস্থ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে সম্পূর্ণ শূন্য হলে, ঐ তলের একটি রেখা শুধু অবশিষ্ট থাকে। এভাবে তলের ধারণা থেকে রেখার ধারণায় আসা যায়।
রেখার উদাহরণ
ধরুন, আপনি পেন্সিল না তুলেই একটা সোজা দাগ টানলেন যা আপনি যতদূর চান, ততদূর পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন গণিতের ভাষায় সেটাই হলো রেখা।
রেখা সম্পর্কে নিম্নে আরও কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো যা আপনাকে বুঝতে সুবিধা প্রদান করবে
- সোজা রাস্তা
- দেয়াল
- পেন্সিল
- দরজার ফ্রেম
- জানালা
- ছবির ফ্রেম
- বইয়ের তাক
- বক্ররেখা উদাহরণ
- নদী
- পাহাড়
- ঢেউ
- একটি চামচে আকৃতি
- জগের হ্যান্ডেল গুলি
- প্লেটের প্রান্ত
রেখা কত প্রকার ও কি কি?
রেখাকে সাধারণত দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- সরলরেখা
- বক্ররেখা
১. সরল রেখা (Straight Line)
এটি হলো এমন রেখা যা কোনো প্রকার দিক পরিবর্তন না করে সোজাসুজি চলতে থাকে। এর প্রতিটি বিন্দু একই দিকে থাকে এবং এটি দুই দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
সহজভাবে বলতে গেলে, কোন বিন্দু সরল পথে চলে এবং উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে তাকে সরলরেখা বলে। এক্ষেত্রে একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যে পথ অতিক্রম করবে এই পথের দিক পরিবর্তন করতে পারবে না তবেই সেই রেখাকে সরলরেখা বলে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, সরলরেখা হলো সেই রেখা যা এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যেতে কোনো দিক পরিবর্তন করে না, অর্থাৎ সোজাসুজি চলে। অন্যভাবে বলা যায়, বিন্দু চলার পথটি সোজা হলেই তাকে সরলরেখা বলে।
উদাহরণ:
- দেয়ালের ধার: একটি সোজা দেওয়ালের কিনারা বা দুটি দেওয়াল যেখানে মিলিত হয়েছে।
- টানা সুতো: শক্ত করে টানটান করা একটি সুতো।
যদি কোন বিন্দু সরল পথে চলে দুই দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তবে তাকে সরলরেখা বলে। দুটি বিন্দুর মধ্যে দিয়ে একটি এবং কেবল মাত্র একটি সরল রেখা আঁকা যায়।

উপরের চিত্রে AB একটি সরল রেখা। যেসব বিন্দু একই সরল রেখায় অবস্থান করে, সেগুলোকে সমরেখ বিন্দু বলা হয়।
২. বক্র রেখা (Curved Line)
এটি এমন রেখা যা চলার পথে দিক পরিবর্তন করে বা বাঁকা হয়ে যায়। এটি অসীম বা সসীম হতে পারে।
সহজভাবে বলতে গেলে, কোন বিন্দু যদি আকাবাকা পথে চলে এবং উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে তাকে বক্ররেখা বলে। ক্ষেত্রে একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যে পথ অতিক্রম করবে এই পথের দিক পরিবর্তন করবে তবেই সেই রেখাকে বক্ররেখা বলে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, যে রেখা এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যেতে দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ সোজাসুজি চলে না তাকে বক্ররেখা বলে। অথবা, বিন্দু চলার পথটি আঁকাবাঁকা হলে তাকে বক্ররেখা বলে।
উদাহরণ:
- নদীর গতিপথ: উপর থেকে দেখলে নদীর আঁকাবাঁকা পথ।
- চাকার ধার: একটি বৃত্তের পরিধি বা বৃত্তাকার কোনো বস্তুর বাইরের কিনারা।
গণিতে, একটি বক্ররেখা একটি অবিচ্ছিন্ন এবং মসৃণ রেখা যা একটি সমীকরণ বা সমীকরণের একটি সেট দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে। বক্ররেখা দ্বি-মাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক হতে পারে এবং বিভিন্ন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সাধারণভাবে, একটি বক্ররেখা তার আকৃতি, তার দৈর্ঘ্য, এর বক্রতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন এর শেষবিন্দু, প্রবর্তন বিন্দু এবং এককতা দ্বারা বর্ণনা করা যেতে পারে। জ্যামিতি, টপোলজি, ক্যালকুলাস এবং ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ সহ গণিতের অনেক শাখায় বক্ররেখাগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তাদের পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ রয়েছে।
একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে যাওয়ার পথে দিক পরিবর্তন হলে সেই পথটিকে বক্র রেখা বলা হয়।

উপরের চিত্রে CD একটি বক্ররেখা। যদি কোনো বিন্দু আঁকাবাঁকা পথে দুই দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তবে তাকে বক্ররেখা বলা হয়।
আরো দেখুনঃ তল কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
রেখার মাত্রা কয়টি
রেখার মাত্রা হল দৈর্ঘ্য। রেখার কেবলমাত্র একটি মাত্রা রয়েছে এবং তা হল দৈর্ঘ্য। রেখার দৈর্ঘ্য থাকে কিন্তু প্রস্থ বা উচ্চতা থাকে না। রেখা একডাইমেনশনাল জ্যামিতিক শব্দ বলে এটির কেবল একটি মাত্রা – দৈর্ঘ্য রয়েছে।
তাই রেখার মাত্রার সংখ্যা হল ১, যা হল দৈর্ঘ্য। অন্য কোন মাত্রা রেখার জন্য প্রযোজ্য নয়।
রেখার বৈশিষ্ট্য
রেখা হলো এমন একটি জ্যামিতিক আকৃতি যা দুটি বিন্দুকে সংযোগ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। রেখার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
- দুটি বিন্দু দিয়ে একটি রেখা তৈরি হয়, এবং তার দৈর্ঘ্য হলো ওই দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব।
- রেখার শুরু বা শেষ নেই।
- বিন্দু যে পথে অগ্রসর হয় তাই রেখা।
- রেখার কোনো শুরু বা শেষ নেই, তাই এর কোনো প্রান্তবিন্দু বা শেষ বিন্দুও নেই।
- রেখা সোজা বা আঁকাবাঁকা যেকোনো প্রকারের হতে পারে।
- রেখা থেকে রশ্নি এবং রেখাংশের সৃষ্টি হয়।
- রেখার প্রস্থ নেই।
- রেখার উচ্চতা নেই।
- রেখার দৈর্ঘ্য আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নেই।
- ত্রিভুজ চতুর্ভুজ এবং বহুভুজ আঁকতে সরলরেখা প্রয়োজন।
- সরল রেখ নিজেকে কখনো ছেদ করতে পারে না।
- বক্ররেখা নিজেকে যত ইচ্ছে ছেদ করতে পারে।
- দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী বক্ররেখা বরাবর দূরত্ব সর্বদা সরলরেখা বরাবর দূরত্ব অপেক্ষা বড় বা বৃহত্তর।
- সরলরেখার যেকোনো বিন্দুতে যে কোন উৎপন্ন হয় তা ১৮০° বা দুই সমকোণের সমান।
- সমান্তরাল রেখা হলো সেই দুটি রেখা, যারা একে অপরের সাথে কখনোই মিলিত হয় না বা একটি বিন্দুতেও ছেদ করে না।
- যদি দুটি রেখা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে ছেদ না করে, তাহলে সেই বিন্দুটিকে তাদের স্পর্শক বলা হয়।
রেখার ব্যবহার
রেখার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকার তৈরি করতে পারি। যেমন: সরলরেখার সাহায্যে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি তৈরি করতে পারি। তেমনি আবার বক্ররেখার সাহায্যে তৈরি করতে পারি বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্ত, ইত্যাদি।
রেখাংশ কাকে বলে?
রেখাংশের উৎপত্তি রেখা থেকে। রেখাংশ বলতে মূলত রেখার সসীম অংশকে বুঝায়। যার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য ও দুইটি প্রান্ত বিন্দু আছে তাকে রেখাংশ বলে।

সহজ কথায়, রেখাংশের দুটি নির্দিষ্ট প্রান্তবিন্দু থাকে এবং এর একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যও থাকে, যা মাপা যায়। রেখা যেমন দুই দিকে অসীম পর্যন্ত চলে, রেখাংশ ঠিক তার বিপরীত এটি শুরু হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে শেষ হয়ে যায়।
রেখাংশের প্রকারভেদ
রেখাংশকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়
- বদ্ধ রেখাংশ
- খোলা রেখাংশ
- অর্ধ খোলা রেখাংশ
১. বদ্ধ রেখাংশ
যে রেখাংশের উভয় প্রান্তবিন্দু রেখাংশটির উপরেই অবস্থিত, তাকে বদ্ধ রেখাংশ বলা হয়।
উদাহরণ
- একটি বৃত্তের ব্যাস হলো একটি বদ্ধ রেখাংশ।
- একটি চতুর্ভুজের চারটি বাহু মিলে একটি বদ্ধ রেখাংশ তৈরি করে।
- একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহুও একটি বদ্ধ রেখাংশ।
২. খোলা রেখাংশ
যে রেখাংশের উভয় প্রান্তবিন্দু রেখাংশটির উপরে অবস্থিত নয়, তাকে খোলা রেখাংশ বলে।
উদাহরণ
- একটি সরলরেখা একটি খোলা রেখাংশ।
- একটি বৃত্তের পরিধি একটি সরলরেখা, এবং এর কোনো প্রান্তবিন্দু নেই, তাই এটি একটি খোলা রেখাংশ।
- একটি ত্রিভুজের বাহু একটি খোলা রেখাংশ হতে পারে।
৩. অর্ধ খোলা রেখাংশ
যে রেখাংশ প্রান্তবিন্দু দুটির যেকোনো একটিকে ধারণ করে, তাকে অর্ধ-খোলা রেখাংশ বলে।
উদাহরণ
- একটি সরলরেখার একটি অংশ একটি অর্ধ খোলা রেখাংশ।
- একটি বৃত্তের ব্যাসের অর্ধেক একটি অর্ধ খোলা রেখাংশ।
- একটি চতুর্ভুজের একটি বাহু একটি অর্ধ খোলা রেখাংশ।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় শিক্ষার্থী আজকের এই পোষ্টে আমরা চতুর্থ শ্রেণির রেখা কাকে বলে? রেখা কত প্রকার ও কি কি? সেই সম্পর্কে উদাহরণ ও চিত্র সহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি করছি এই বিষয়ে ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছো।

