Jahiliyyah era

আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ জেনে নিবো।

তো তোমরা যদি আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা। তবে প্রথমে আমরা আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ তা জেনে নিব।

আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ

ভূমিকা: ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবের। সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ছিল চরম তমসাচ্ছন্ন ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সভ্যতার বিকাশ ঘটলেও আরবের লােকেরা ছিল সভ্যতার সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সে সময় আরবের প্রায় সকল স্থানেই বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। তাই এই সময়কালকে আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগ বলা হয়ে থাকে।

Jahiliyyah era

আইয়্যামে জাহেলিয়া: প্রাক ইসলামি আরবকে আইয়্যামে জাহেলিয়া বলা হয়।

শাব্দিক অর্থে: “আইয়্যাম” শব্দের অর্থ যুগ বা সময়। আর “জাহেলিয়া” শব্দের অর্থ তমসা বা অন্ধকার, অজ্ঞতা, বর্বরতা, কুসংস্কার ইত্যাদি বুঝায়। সুতরাং আইয়্যামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা তমসাচ্ছন্ন যুগ বুঝায়।

ব্যাক অর্থে : ইসলামের আগমনের পূর্বে আরবের মানুষের সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল তাই আইয়্যামে জাহেলিয়া নামে পরিচিত। | 0 আইয়্যামে জাহেলিয়া : আইয়্যামে জাহেলিয়ার সময় আরব বিশ্ব সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।

মেসিওরিযান বলেন, এ আশ্চর্যজনক ঘটনার পূর্বে দুনিয়ার জ্ঞান বিজ্ঞান, ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাসে আরবদের কোনােপ্রকার অস্তিত্ব ছিল না। তবে তাদের নিজস্ব কোন কষ্টিও ছিল না এ কথা বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে হিট্টি বলেন, দক্ষিণ আরবের মত সুশিক্ষিত ও জ্ঞান গরিমায় উন্নত সমাজকে অজ্ঞতা বা বর্বরতার সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

ওয়েল ইউসেন-এর মতে, আরবদের ধর্ম ও রাজনৈতিক জীবন। আদিম অবস্থায় ছিল। তবে কৃষ্টি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে তাদের অনেক গুণ থাকলেও তাদের চারিত্রিক অধঃপতন এমন এক পর্যায়ে নেমে যায় যে, তাদেরকে অসভ্য ও বর্বর বলা যায়।

কোন প্রকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকায় কখন এ যুগের সূচনা হয় তা বলা যায় না। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন, হজরত আদম (আ) এর সময় থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বের সময়কে আইয়্যামে জাহেলিয়া বলা হয়। কিন্তু এ মতবাদ গ্রহণযােগ্য নয়।

আরব ঐতিহাসিকগণের মতে, হজরত ঈসা (আ) এর মৃত্যুর পর থেকে ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত ছিল আইয়্যামে জাহেলিয়া।

ঐতিহাসিক নিকলসন বলেন, এই অবস্থা ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বের একশ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি এ মত সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, নবী, ঐশী কিতাব ও ধর্মীয় চেতনার অবর্তমানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়াত প্রাপ্তির এক শতাব্দী পূর্বে আরব জাতির যে অধঃপতন একে অজ্ঞতার যুগ বলা হয়। | পিকে হিট্টি আরাে বলেন, সাধারণত জাহেলিয়া শব্দের অর্থ অজ্ঞতার বা বর্বরতার যুগ বুঝায় যে যুগে আরবে কোন নিয়মকানুন ছিল না। কোন নবির আবির্ভাব ঘটেনি এবং কোন ঐশী কিতাব নাযিল হয়নি।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়্যামে জাহেলিয়া বলতে বর্বরতার যুগকে বুঝায়। জাহেলিয়া যুগে আরবদের মাঝে যদিও কিছু ভালাে গুণ ছিল কিন্তু তাদের খারাপ গুণই বেশি ছিল। সে জন্য অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বের যুগ ছিল অজ্ঞতার ও বিশৃঙ্খলার যুগ।

আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা

ভূমিকাঃ ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক। কেন্দ্রী শাসনের অভাবে সমগ্র আরব শত সহস্র গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রি ছিল আরবদের রাজনৈতিক জীবনেরব মূলন ভিত্তি।

জাহেলিয়া যুগে রাজনৈতিক অবস্থাঃ জাহেলিয়া যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ইসলাম পূর্ব আরবে কোম কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। উত্তর আরবে বাইজান্টাইন এবং দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কয়েকটি রাজ্য ছাড়া সমগ্র আরব এলাকা ছিল স্বাধীন।

এ কারণে আররের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। সমগ্র আরব ছিল শত শত গোত্রে বিভক্ত। গোত্র শাসনই ছিল আরবীয়দের রাষ্ট্রীয় জীবনের মূল ভিত্তি। গোত্রের প্রধান বা দলপতিকে বলা হতো শেখ। শেখ নির্বাচিত হবার জন্য বংশ গৌরব, মহানুভবতা, বীরত্ব প্রভৃতি মানবিক গুণাবলীর প্রয়োজনে হতো। কোন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আরব গোত্রগুলো প্রায় কলহে লিপ্ত থাকত।

কোন গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ বাধলে তা যুগ যুগ ধরে চলত। গোত্র যুদ্ধের মূল ম্নত্র ছিল “Blood for blood”। কখনও খুনের কেসারত ” Blood money” প্রদান করলে যুদ্ধের অবসান হতো। মক্কায় কুরাইশ গোত্রপতিদের চেষ্টায় গঠিত হয় মালা বা মন্ত্রনা পরিষদ। মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর অধিপতিদের নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়েছিল। মালা কেবল পরামর্শ প্রদান করতে পারত।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবীয়দের রাজনৈতিক জীবন ছিল অনেকটা গোত্র নির্ভর শাসন। তারা নিজ গোত্রের প্রতি আনুগত্য মনোভাব দেখালেও অন্য গোত্রের সাথে সর্বদা যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। তবে আপনারা চাইলে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।

জাহেলিয়া যুগের সামাজিক অবস্থা

ভূমিকাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবসহ গোটা বিশ্ব ছিল জাহেলিয়াতের অজ্ঞতা, অপসংস্কৃতি, ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বেহায়াপনার তিমির অন্ধকারে নিমজ্জিত। ঐতিহাসিকগণ এ চরম বীভৎস যুগকে The age of ignorance বা অজ্ঞতার যুগ বলে অভিহিত করেছেন।

Jahiliyyah era

জাহেলিয়া যুগে আরবদের সামাজিক অবস্থাঃ নিম্নে ইসলাম পূর্ব জাহেলিয়া যুগে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরবদের সামাজিক অবস্থা বর্ণনা করা হলো-

বংশভিত্তিক কৌলিন্য প্রথাঃ আরবে বংশভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত কৌলিন্য প্রথা প্রসঙ্গে মওলানা আকরম খাঁ বলেন, প্রাক-ইসলাম যুগে সেখানে যে বংশগত ও গোত্রগত কৌলিন্য প্রথার প্রভাব অপ্রতিহতভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। এ বংশ মর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে অহংকার, ঘৃণা ও হিংসাবিদ্বেষ ব্যাপকরূপে বিদ্যমান ছিল।

মাদকাসক্তিঃ জাহেলিয়া যুগে আরবগণ ছিল অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত। মদ্যপ হয়ে তারা নর্তকীদের সাথে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হতো। ঐতিহাসিক খোদা বক্স বলেন, War, women and wine were there observing possessions of the Arabs. অর্থাৎ, মদ্যপান, নেশাসক্তি, নারী সঙ্গম প্রভৃতি চরম অনৈতিকতা আরবদের মধ্যে বিরাজমান ছিল।

নারীদের অবস্থাঃ জাহেলিয়া যুগে আরবে নারীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না। নারীকে পণ্যদ্রব্য এবং ভোগ বিলাসের সামগ্রী মনে করা হতো। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতেও তাদের কোনো অধিকার ছিল না। পুরুষ কর্তৃক নারীরা সর্বত্র নিগৃহীত হতো। তবে মক্কায় নারীদের মর্যাদা কিছুটা লক্ষণীয়। যেমন খাদীজা (রাঃ) ও আবু জাহেলের মা সে যুগেও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।

কন্যা সন্তানের জীবন্ত সমাধিঃ প্রাক-ইসলাম যুগে আরবরা কন্যা সন্তানের জন্মকে দুর্ভাগ্য ও লজ্জাজনক মনে করত। কখনো কখনো নিষ্ঠুরতার বশবর্তী হয়ে তারা এ সকল নিস্পাপ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতে কুণ্ঠাবোধ করত না।

বৈবাহিক অবস্থাঃ প্রাক-ইসলাম সমাজব্যবস্থায় সুষ্ঠু বিবাহ প্রথা ছিল না। পুরুষরা যেমন একাধিক স্ত্রী ও উপপত্নী রাখতে পারত, তেমনি নারীরাও একাধিক পতি রাখতে পারত। একটি লোক যত ইচ্ছা বিবাহ করত এবং ইচ্ছামতো তালাক দিত। ভাই আপন বোনকে এবং পিতার মৃত্যুর পর বিমাতাকে বিয়ে করার কুপ্রথাও তাদের মাঝে প্রচলিত ছিল।

দাসদাসীদের অবস্থাঃ বহু আগ থেকেই আরবে দাস প্রথা চালু ছিল। দাসদাসীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। পণ্যদ্রব্যের মতো বাজারে তাদের কেনা বেচা করা হতো। দাসদাসীকে নির্মমভাবে কাজে খাটাত ও নির্যাতন করত। তাদের জীবন মৃত্যু প্রভুর মর্জির ওপর নির্ভর করত। বিয়ে শাদীর অধিকারটুকুও তাদের ছিল না।

সুদ প্রথাঃ শোষণের অন্যতম হাতিয়ার সুদ প্রথাও আরবে প্রচলিত ছিল। লোকেরা মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির চক্রবৃদ্ধি সুদের যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্বে পরিণত হয়েছিল। সুদ পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ গ্রহীতার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির সঙ্গে তার স্ত্রী পুত্রকেও ঋণদাতা দখল করত।

বিকৃত যৌনাচার ও ব্যভিচারঃ জাহেলী যুগে আরবরা বিভিন্ন ধরনের যৌনাচার, ব্যভিচার ও নারী ধর্ষণে অনুরাগী ছিল। এ প্রসঙ্গে মওলানা আকরম খাঁ বলেন, পুং মৈথুন, নারীর অস্বাভাবিক মৈথুন ও পশু মৈথুন তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং তাদের কাছে এসব নির্দোষ কর্ম বলে পরিগণিত হতো।

নারীরা খেলার সামগ্রীঃ প্রাক ইসলামী যুগে অভিজাত আরবরা নিছক খেলাচ্ছলে নারীদের ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে ঘোড়া ছুটিয়ে দিত। এর ফলে কোন হতভাগা নারীর মৃত্যু হলে তারা উল্লাস করে আনন্দ উপভোগ করত।

জুয়াখেলাঃ জুয়াখেলা আরব সমাজে অবসর বিনোদনের একটি বিশেষ মাধ্যম ছিল। জুয়ার নেশা তাদের এমন পাগল করে তুলত যে, তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজ স্ত্রী কন্যাকেও জুয়ার বাজি ধরে বসত।

লুটতরাজঃ লুটপাট, মারামারি, রাহাজানি, দাঙ্গা হাঙ্গামা ছিল জাহেলিয়া আরব সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। পরসম্পদ অপহরণ ও বলপূর্বক লুণ্ঠন আরব বেদুইনের জীবনধারার অংশ ছিল।

কুসংস্কারঃ তৎকালে আরব সমাজে কুসংস্কার এত বেশি প্রচলিত ছিল যে, তারা কোনো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তীরের সাহায্যে দেবমূর্তির সাথে পরামর্শ করত। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে এ বিশ্বাসে তার কবরের পাশে উট বা ঘোড়া বেঁধে রাখত যে, মৃতব্যক্তি এক সময় কবর থেকে উঠে অজ্ঞাত কোনো স্থানে বা স্বর্গের দিকে যাত্রা করবে।

অসৎ গুণাবলিঃ জাহেলিয়া সমাজের মানুষের মধ্যে আভিজাত্যের দম্ভ, আত্মম্ভরিতা, চরিত্রহীনতা, পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা, অপরের কুৎসা রটনা ইত্যাদি অসৎ গুণাবলি মহামারীর রূপ ধারণ করেছিল। আরবের মতো নৈতিক ও সামাজিক অধঃপতিত সমাজ সমকালীন বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায়নি।

সদগুণাবলিঃ জাহেলিয়াতের বিভীষিকায় নিমজ্জিত আরবদের মাঝে কতিপয় সদগুণও পরিলক্ষিত হতো। সাহসিকতা, স্বাধীন চেতনা, উদারতা, বদান্যতা, একনিষ্ঠতা, আতিথেয়তা, আশ্চর্যজনক স্মৃতিশক্তি, কাব্যচর্চা, বাগ্মিতা, আত্মসম্মানবোধ প্রভৃতি মহৎ গুণে তারা গুণান্বিত ছিল।

উপসংহারঃ একথা সুস্পষ্ট যে, প্রাক-ইসলাম যুগে আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল বিভিন্ন অন্যায়, অনাচার, পাপাচার, ব্যভিচার, দুর্নীতি ও বিশৃখলায় পরিপূর্ণ। মহানবী (স)-এর আবির্ভাবে নীতি নৈতিকতাহীন আরব সমাজ ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সুষ্ঠু সমাজ সভ্যতার গোড়াপত্তন করে।

জাহেলি যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা

জাহেলিয়াত যুগের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবস্থাকে কোনোক্রমেই সামাজিক অবস্থার চেয়ে উন্নত বলা যেতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তেজারত ব্যবসা-বাণিজ্যই ছিল আরব অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন।

কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে গমনাগমন, মালপত্র পরিবহন, বাণিজ্যের উদ্দেশে ভ্রমণ পর্যটনের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো এতই সমস্যাসংকুল ছিল যে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা ছিল এক দুষ্কর ব্যাপার। তৎকালে মরুপথে গমনাগমন এবং মালপত্র পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল উট।

উটের পিঠে চড়ে যাতায়াত এবং মালপত্র পরিবহনের ব্যবস্থাটি ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া পথও ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। সব দিক দিয়ে সুসজ্জিত বড় বড় কাফেলা ছাড়া পথ চলার কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেকোনো সময় দস্যুদল কর্তৃক আক্রান্ত এবং যথাসর্বস্ব লুণ্ঠিত হওয়ার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতে হতো কাফেলার সবাইকে।

অবশ্য হারাম মাসগুলোতে তাঁরা কিছুটা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা ছিল সময়ের একটি সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ। কাজেই, বাণিজ্যনির্ভর হলেও নানাবিধ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁরা তেমন সুবিধা করতে পারতেন না।

তবে হারাম মাসগুলোতে ‘উকাজ, জুল মাজাজ, মাজান্নাহ এবং আরো কিছু প্রসিদ্ধ মেলায় বেচাকেনা করে তাঁরা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন। আরব ভূখণ্ডে শিল্পের প্রচলন তেমন এতটা ছিল না। শিল্প কারখানার ব্যাপারে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় আরব দেশ আজও পেছনে পড়ে রয়েছে তুলনামূলকভাবে, সেকালে আরো অনেক বেশি পেছনে পড়ে ছিল।

শিল্পের মধ্যে বস্ত্র, চর্মশিল্প, ধাতবশিল্প প্রভৃতি শিল্পের প্রচলন চোখে পড়ত। অবশ্য এ শিল্পগুলো ইয়ামান, হীরা ও শামরাজ্যের সন্নিকটস্থ অঞ্চলগুলোতেই প্রসার লাভ করেছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু সুতাকাটার কাজে সব অঞ্চলের মহিলাদেরই ব্যাপৃত থাকতে দেখা যেত।

আরব ভূখণ্ডে অভ্যন্তর ভাগের লোকেরা প্রায় সবাই পশু পালন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। মরু প্রান্তরের আনাচে-কানাচে যেসব স্থানে কৃষির উপযোগী ভূমি পাওয়া যেত সেসব স্থানে কৃষিরব্যবস্থা ছিল।

কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি সব চেয়ে জটিল ছিল তা হচ্ছে, মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যম জীবনমান উন্নয়ন, মহামারি ও বোগব্যাধি দূরীকরণ কিংবা অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজে অর্থ-সম্পদের খুব সামান্য অংশই ব্যয়িত হতো। সম্পদের সিংহ ভাগই ব্যয়িত হতো যুদ্ধবিগ্রহের কাজে। কাজেই, জনজীবনে সুখ, শান্তি বা স্বাচ্ছন্দ্য বলতে তেমন কিছুই ছিল না।

সমাজে এমন এক শ্রেণির লোক ছিল যাদের দুবেলা দুমুঠো অন্ন এবং দেহাবরণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বস্ত্রখণ্ডের সংস্থানও সম্ভব হতো না। (সূত্র : নবীদের কাহিনি) তিনি নবুয়ত লাভের পর ঈমানের আহ্বানের পাশাপাশি এমন কিছু পদক্ষেপ নিলেন, যা তৎকালীন অর্থনীতিতে বদলে দিয়েছিল। বিশেষত সে কর্মসূচির ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে মদিনার অর্থনীতি সাফল্য লাভ করে।

রাসুল (সা.)-এর দেওয়া কর্মসূচি হলো উপার্জনে হালাল ও হারাম নির্ধারণ, সুদ উচ্ছেদ, ব্যাবসায়িক অসাধুতা উচ্ছেদ, জাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন, বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা, মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন, উত্তরাধিকার নীতি প্রণয়ন, রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপের বিধান ইত্যাদি।

আমাদের শেষ মতামত

আমরা এতক্ষন জেনে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিস্তারিত বিবরণ। যদি তোমাদের আজকের এই আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকতে পারেন।